সুজয় পাল, কলকাতা: উলটপুরাণ!
ক’বছর আগে পর্যন্ত চোরাগোপ্তা ভাবে পোস্ত চাষে রাজ্যের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মালদহ৷ জেলার প্রায় ১১হাজার হেক্টর জমিতে পোস্ত চাষ হত৷ নারকোটিকস কনট্রোল বুব়্যে (এনসিবি) সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট এলাকায় ধারাবাহিক প্রচার অভিযান ও সচেতনতার জেরে বড় সাফল্য মিলেছে৷ সাম্প্রতিক সমীক্ষায় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ১১হাজার একরের পরিবর্তে এখন চোরাগোপ্তা ভাবে মাত্র ২.৫ হাজার একর জমিতে পোস্ত চাষ হচ্ছে৷
এনসিবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘মালদহে পোস্ত চাষের প্রবণতা কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ৷ অথচ রাজ্যর চোরা বাজারে পোস্তর খোলা থেকে তৈরি বিশেষ ধরণের মাদক (আফিম) এর জোগান রয়েছে স্বাভাবিক৷ মালদহের বদলে অন্য জেলায় আফিম চাষ হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’ এনসিবি-র পক্ষ থেকে অন্য জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। ওই ধারাবাহিক প্রচার অভিযান ও সচেতনতার জেরে মালদহে পোস্ত চাষে লাগাম টানা গেলেও কিভাবে রাজ্যের কালোবাজারে একই রকম আমদানি রয়েছে আফিমের? এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের৷ স্বভাবতই, এনসিবি কর্তারা সন্দেহ করছেন- মালদহ ছাপিয়ে রাজ্যের অন্য কয়েকটি জেলাতেও চোরাগোপ্তাভাবে পোস্ত চাষ হচ্ছে৷
এক্ষেত্রেই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে৷ সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ থেকে বেশ কয়েকটি মাদক চক্রকে পাকড়াও করে সিআইডি৷ ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বীরভূমের দুবরাজপুর খয়রাশোল, কাঁকরতলা, লোকপুর, সদাইপুর, নানুর ও মহম্মদবাজারের একাংশে পোস্ত চাষ হচ্ছে বেশ রমরমিয়েই৷ জেরায় ধৃতরা গোয়েন্দাদের জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে তারা মাদকের কাঁচা মাল হিসেবের পোস্তর খোলা সংগ্রহ করে৷
বিষয়টি জানতে পারার পরই পোস্ত চাষ বন্ধে তৎপর হয় জেলা প্রশাসন৷ পোস্ত চাষ বন্ধ করতে গতমাসে বীরভূমের কয়েকটি এলাকায় বাইক মিছিল করেন স্বয়ং জেলাশাসক পি মোহন গান্ধি থেকে পুলিশ সুপার সুধীর কুমার৷ সেসময় পরিস্থিতির জন্য সরাসরি শাসকদলকে দুষে বিজেপির জেলা সাধরণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডলের অভিযোগ ছিল, ‘‘পোস্ত চাষ থেকে কোটি কোটি টাকার বখরা ঘরে তুলছেন তৃণমূলের নেতারা৷ ফলে প্রশাসনের একাংশের স্বদিচ্ছা থাকলেও শাসকদলের নেতাদের মদতেই জেলার কয়েকটি এলাকায় এখনও রমরমিয়ে পোস্ত চাষ হচ্ছে৷’’ যদিও এবিষয়ে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কোনও মন্তব্যই করতে চাননি৷ যাবতীয় দায় প্রশাসনের ঘাড়ে ঠেলে তাঁর জবাব, ‘‘ওটা প্রশাসনের বিষয়৷ প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করুন৷ আমি কোনও মন্তব্য করব না!’’
প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা সত্বেও কেন পোস্ত চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা? মালদহের পোস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক একর জমিতে পোস্ত চাষ করলে আট কেজি আফিম ফল পাওয়া যায়৷৷ কেজি প্রতি আফিমের দাম ১৫ লক্ষ টাকা৷ মালদহের পাশেই সীমান্ত৷ ফলে সীমান্ত দিয়ে সহজেই ভিন দেশে তা পাচার করে দেওয়া যায়৷
বীরভূমের ক্ষেত্রে চিত্রটা আবার এরকম৷ প্রধান রাস্তা থেকে গ্রামের তস্য গলি তস্য গলির ভিতরে যেখানে চারচাকা তো দূরস্ত দু’চাকাও ঢুকতে পারবে না, তেমন এলাকায় বিঘের পর বিঘের জমিতে রমরমিয়ে চলছে পোস্ত চাষ৷ চাষিদের কথায়, ‘‘এলাকায় সেচের সমস্যা রয়েছে৷ ফলে বর্ষা ছাড়া বাকি সময় জমিতে তেমন চাষ হয়না৷ ১ বিঘে জমিতে ধান রোয়া থেকে কাটা, ঝাড়াই-বাছাই করা সবমিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৬হাজার টাকা৷ ভাল ফলন হলে বিঘে পিছু ১০ হাজার টাকা লাভের সম্ভবনা থাকে৷ আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতিরও আশঙ্কা থাকে৷ সেখানে বিঘে প্রতি জমিতে পোস্ত চাষের জন্য মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করেই নুন্যতম তিনলক্ষ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ পাওয়া যায়৷’’
এরপরই কার্যত পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ‘‘মাত্র ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নুন্যতম খরচ করে লাখ টাকার লাভকেই বা ছাড়তে চাই বলুন৷ সেজন্য এদিক ওদিকে কিছু টাকা আমরা দিয়ে দিই৷ ‘ওরা’ও আসে না!’’ চাষিরা জানাচ্ছেন, ফল থেকে পোস্ত বের করে নেওয়ার পর খোলা থেকে বিশেষ ধরণের মাদক (আফিম) তৈরি হয়৷ যা বিক্রি হয় চড়া মূল্যে৷
যা শুনে এনসিবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘ধরপাকড় থেকে সচেতনতা অভিযান, আমরা ধারাবাহিকভাবে সবই জারি রেখেছি৷ কিন্তু সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকলে কি আর করা যাবে!’’
The post মালদহ ছাড়াও কি অন্যত্র হচ্ছে আফিম চাষ? খুঁজছে এনসিবি appeared first on Kolkata24x7 | Latest Bengali News | Kolkata News Breaking News | Business, Tollywood, Cricket - বাংলায় সর্বাধিক প্রচারিত পূর্ণাঙ্গ নিউজ পোর্টাল